নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান (বুলেট)এর সদস্যপদ পুনর্বহাল করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
৩০জানুয়ারি ২৫ ইং তারিখ বৃহস্পতিবার বিকেল ২:৩০ মিনিটে তাঁর উক্ত শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাহার করা হয়। উল্লেখ্য বৈষ্ণম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত ১৯/১২/২০২৪ ইং তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা আন্দোলনকারীরা সংশ্লিষ্ট জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সরকারি পিপি ও আইনজীবীদের প্রতি দাবী রাখেন আওয়ামী লীগের ভোট চোর নেতাদের/দোসরদের যেন অল্প সময়ে জামিন দেওয়া না হয়; কেননা একই ধারার অপরাধের মামলায় ওই ছাত্ররা মাসের পর মাস বছর পর বছর ইতিপূর্বে আওয়ামীলীগ ফেসিস্ট সরকারের আমলে জামিন পাননি এ কারণে তাদেরকে জেলহাজতে থাকতে হয়েছে ।
ইহাছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাদের জামিন করার পরে ফেসবুকে তাঁর নিজ আইডি Mostafizur Rahman Bullet নামক আইডিতে”জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগান লেখার জেরে আসামীর পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান (বুলেট) এর শাস্তির দাবি করলে গত ২২/১২/২০২৪ ইং তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির এক জরুরী সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে সিনিয়র আইনজীবী জনাব, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (বুলেট)এর সদস্য পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন । সিনিয়র এ্যাড মোস্তাফিজুর রহমান বুলেট জানান, আমি মারসি পিটিশন দিয়ে উক্ত শাস্তি মূলক সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করি সমিতির সাধারণ সভায় ৩০জানুয়ারি২৫ ইং তারিখ বৃহস্পতিবার বিকেল ২:৩০ মিনিটে উক্ত শাস্তি মূলক সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাহার করেন।
জানাগেছে,আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই/২০২৪ ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পরে উক্ত সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (বুলেট) একের পর এক জেলার বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ২৪ ঘন্টা এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জামিন করে যাচ্ছিলেন চাঁদাবাজি সহ বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের মামলায় । এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭/১২/২৪ইং তারিখে দুজন আসামিকে জামিন করার পরে এডভোকেট Mostafizur Rahman Bullet নামক তাঁর ভেরিফাইড নিজ ফেসবুক আইডিতে লিখেন
“আলহামদুলিল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। নাচোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নাচোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ খান ঝালু মামাকে এবং নাচোল মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও নাচোল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মশিউর রহমান বাবু ভাইকে (তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগ) কে আজ চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক আইনের মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলায় জামিন করলাম।”
পরবর্তীতে বৈষ্ণম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে উক্ত তিন মাসের সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সমিতির যে কোন সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে বাধ্য;তাই এ বিষয়ে আমার কোন আপত্তি নাই। কারণ বার এবং বেঞ্চ আমার আইন পেশার অভিভাবক।
তিনি আরো বলেন, সকল রাজনীতিক দলসহ দেশের সকল নাগরিকের উচিত বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে তার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করা। আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা অযাচিত চাপ দ্বারা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করা কোন ভাবেই উচিত নয়; এতে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হয়। দেশে administration of justice and rule of law বা আইনের শাসন এবং ন্যায় বিচার পরিচালন কে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে বিচার বিভাগকে সকল প্রকার অযাচিত চাপ এবং তাপের উর্ধ্বে রাখতে হবে যাতে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে বিচারকগণ তাঁদের বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারেন।
বিজ্ঞ বিচারকদের কোনো সিদ্ধান্তে কারো দ্বিমত থাকলে আইনানুগ পদ্ধতিতেই সেটা পরিবর্তনের জন্য উচ্চ আদালতে যাবার সুযোগ রয়েছে। তাই বলে রাস্তা ঘাটে আন্দোলন সংগ্রাম করা কোনভাবেই সমীচীন নয়।
বিজ্ঞ বিচারকগণ সেদিন আইনানুগভাবেই মামলার গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণে আসামিদের জামিন দিয়েছিলেন।কারণ মামলাটি ২০১৮ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালে দীর্ঘ ছয় বছর পরে জি,আর ১৭২/২৪(নাচোল) মামলার এজাহারটি নাচোল থানায় রুজু করা হয়েছে। কিন্তু মামলার এজাহারের সাথে বিস্ফোরক উপাদানাবলীর কোন আলামত জব্দ তালিকায় নাই এবং মারামারির কারণে দন্ডবিধি আইনের ৩২৫ এবং ৩০৭ ধারার অভিযোগ এজাহারে থাকলেও এর সমর্থনে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট নাই। এমনকি ওই দুজন আসামীর নাম এজাহারে উল্লেখ নাই। এবং এজারভুক্ত অনেক আসামিকে বিজ্ঞ আমলী আদালত মামলার গুনাগুন বিশ্লেষণ করে ইতিপূর্বে জামিন দিয়েছেন। সুতরাং নাচোল পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং নাচোল উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানের জামিনটি ছিল আদালতের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, আইন সংগত এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত । এতে কারো সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোন কারনই ছিল না। এটি অন্য কোন পক্ষ অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিলের স্বার্থে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল ছাত্রদেরকে দিয়ে ।বিষয়টি পরে বিজ্ঞ আইনজীবীরা এবং আন্দোলনকারী ছাত্ররা বুঝতে পেরেছেন।আমি আইনজীবীদের সকল সিদ্ধান্তকে বার এবং বেঞ্চের সকল সিদ্ধান্তকে সদা সর্বদা শ্রদ্ধা করেছি মেনে চলেছি এবং আমি বার ও বেঞ্চের যেকোনো সিদ্ধান্ত আগামীতেও ১০০% শ্রদ্ধা করব এবং ১০০% মেনে চলবো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে। তিনি আরো বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্ররা আমাদেরই ভাই ব্রাদার তারা বয়সে ছোট তাদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেমের কারণে আবেগ কাজ করছে। অতীতে তারা হয়তো নির্যাতিত হয়ে থাকার কারণে তাদের এই শক্ত অবস্থান। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের এই আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। আমি তাদেরকে আঘাত দিতে চাইনি তবুও তারা কোন কারনে মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে ওই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশের জন্য লজ্জিত, আন্তরিকভাবে, দুঃখিত, অনুতপ্ত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আগামীতে দেশ গড়ার কাজে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে আমার আইন পেশায় নিয়োজিত থাকবো।