নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে,বিশেষ করে ৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর কোন ভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি নাচোল থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। যদিও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একাধিক আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারপরও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি এই উপজেলায়। আইন শৃঙ্খলা অবনতির কারণে ৫ আগস্টের পর থেকে ৩ কিশোর সহ ৫ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে । উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। উপজেলা জুড়ে চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু এসব বিষয়ে পুলিশের নিস্ক্রীয়তায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
১৭ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলার মল্লিকপুরে দুই গ্রুপের কিশোরদের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে খোলসি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে রায়হান ও একই গ্রামের এজাবুলের ছেলে মাসুদকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে হত্যা করে । পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে তাঁদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় নাচোল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলেও এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে মামলার প্রধান আসামি শাহীনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাচোল সদর ইউনিয়নের পীরপুর সাহানাপাড়া গ্রামের মজিদুল হকের ছেলে স্কুল ছাত্র ইসমাইল গত ৮/৮/২০২৪ তারিখে সানাপাড়া বাজারে জনৈক রয়েলের দোকানের সামনে রক্তাক্ত দেহ ও ডান চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে নাচোল থানা পুলিশ। পরে তার পিতা একই গ্রামের জানে আলমের ছেলে আনসারুল কে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সে মামলায় আসামি ধরতেও ব্যর্থ হন পুলিশ।
এছাড়া উপজেলার ফতেপুর ইউপির পাহাড়পুর গ্রামের সাঈদ আলীর ছেলে আব্দুল হান্নানকে ২৮ সেপ্টেম্বর /২৪ তারিখে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে। তাকে উদ্ধার করে আত্মীয়-স্বজনরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে ১২ অক্টোবর/২৪ তার মৃত্যু হয়। ঐদিন তার ভাই আব্দুর রশিদ নাচোল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে ঐ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে প্রতিবন্ধী অটোচালকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এর প্রতিবাদে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দেওয়ান মোঃ আলমগীরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
৬ ডিসেম্বর নাচোল সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি কামরুল ইসলামের লাশ সূর্যপুর গ্রামের বাবু হাজীর পিয়ারা বাগানের পাশ থেকে উদ্ধার করে নাচোল থানা পুলিশ।
১৭ নভেম্বর উপজেলার পৌর এলাকার গুঠইল গ্রামে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে এসে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালায় , এছাড়া বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাটেরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন।ঐ ঘটনায় ঐ এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়।
এদিকে উপজেলার পৌর এলাকার রেলওয়ে স্টেশন দেওপাড়া গ্রামে ছাগলে পেঁয়াজের চারা নষ্ট করাকে কেন্দ্র করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য খাইরুল ইসলাম ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোশারফ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গ্রুপের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১৬ জানুয়ারি /২৫ তারিখ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কসবা ইউপির কালইর কাঠালিপাড়া থেকে মুস্তাকিমের স্ত্রী মুসলিমার (২৫)এর লাশ উদ্ধার করেছে নাচোল থানা পুলিশ।
ইতিমধ্যেই নাচোল উপজেলার সাবেক পৌর কাউন্সিলর সানাউল্লাসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে গরু চুরি হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় ব্যাটারি চালিত অটো চুরির ঘটনা ঘটেছে।
তাছাড়া বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ । এই উপজেলায় গভীর নলকূপের অপারেটর পদে ৫৩৩টির বিপরীতে ৭২৯টি আবেদন পত্র জমা পড়ে। গত ২২,২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর গভীর খন্ডকালীন অপারেটর কাম রেকর্ডকিপার নিয়োগ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং গত ৩১ডিসেম্বর অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পরপরই সাধারণ কৃষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এতে বিভিন্ন ডিপে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া আগামীতে আরো আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এছাড়া গত ৭ জানুয়ারি২৫ তারিখে “নাচোলে গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ” শিরোনামের সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকে হুমকি প্রদান করলে গত ৯জানুয়ারি ২৫ তারিখে অলিউল হক ডলার থানায় নিরাপত্তার স্বার্থে একটি জিডি করেন।
৫ আগস্ট ২৪ থেকে ১৯ জানুয়ারী ২৫ তারিখ পর্যন্ত নাচোল থানায় সব মিলিয়ে ৯৩ টি মামলা দায়ের হয়েছে।এই ধারাবাহিকতায় দিনে দিনে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ এবং ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুলিশ সবসময় মাঠে আছে। এবং চুরি ঠেকাতে টহল জোরদার করা হয়েছে।